English
মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪
...

দেশ বাঁচাতে নৌকায় ভোট দিন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা, ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, রবিবারঃ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, "আমরা উন্নয়ন করি, আর বিএনপি মানুষ খুন করে। এই চট্টগ্রামে বিএনপি বারবার বোমা ও গ্রেনেড মেরেছে। বিএনপি মানুষের শান্তি চায় না।" আজ বিকেলে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর এবং উত্তর-দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।  

শেখ হাসিনা খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের রোষানল থেকে দেশ ও জনগণকে বাঁচাতে নৌকায় ভোট দেবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "১৯৯৬ সালে তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিলো। এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে তাদের আঁতাত। আমরা কল্যাণ করি মানুষের উন্নয়নের জন্য। বিএনপি পারে মানুষ খুন করতে। গ্রেনেড মেরে, গুলি করে তারা মানুষ হত্যা করেছে। দেশের ৬৩ জেলায় তারা একযোগে বোমা মেরেছিলো বিএনপি। ক্ষমতায় থাকতে দুই হাতে লুটপাট করেছে জনগণের সম্পদ পাচার করেছে।"

যুদ্ধাপরাধী, খুনি ও জাতির পিতার খুনিদের পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক দল জামায়াত-বিএনপি বাংলাদেশের মাটিতে  যেন আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকারও আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, "আমরা আপনাদের দোয়া, সহযোগিতা ও ভোট চাই। কারণ, যাতে যুদ্ধাপরাধী ও খুনিরা আবার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।" 

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, "জিয়া যখন মারা যায় আমরা শুনেছিলোম পরিবারের জন্য তিনি কিছুই রেখে যাননি। এখটা ভাঙা সুটকেস ছাড়া কিছু ছিলো না। আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেই কীভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছিলো। তারা কি জাদুর কাঠি পেয়েছিলো?"

তিনি আরো বলেন, "আমরা রিজার্ভ খরচ করেছি দেশের মানুষের জন্য। জনগণের বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ, করোনা ভ্যাকসিন ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করে দিয়েছি। আমরা জনগণের জন্য ভাবি। কারণ আমরা জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করি।যাওয়ার আগে আমি আপনার কাছে একটি প্রতিশ্রুতি চাই যে আপনি অতীতের মতো আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দেবেন এবং আমাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। হাত তুলে বলুন, আপনি নৌকায় ভোট দেবেন"

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আজকে খালেদা জিয়া কারাগারে কারণ বিদেশ থেকে এতিমের জন্য যে টাকা এসেছে তা এতিমের হাতে না গিয়ে নিজেরা পকেটস্থ করেছে। জিয়া অরফানেজের টাকা চুরি করেছে বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা মামলায় তার ১০ বছরের সাজা হয়েছে। আর তার ছেলে যে মারা গেছে (আরাফাত রহমান কোকো) সিঙ্গাপুর থেকে তার পাচার করা কিছু টাকা সরকার ফেরত আনতে পেরেছে।"

তারেক রহমানকে কুলাঙ্গার আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, "এই তারেকই ২০০৭ সালে সেই সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে আর কোনদিন রাজনীতি করবে না বলে মুচলেখা দিয়ে বিদেশে পালিয়েছিল। সে এখন লন্ডনে রাজার হালে থেকে দেশের অভ্যন্তরে তাঁর সরকারের করে দেয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে যেকোন ধরনের খুন খারাপি, বোমাবাজি তথা নাশকতামূলক কাজ পরিচালনা করে।"

শেখ হাসিনা বলেন, "বাবা, মা, ভাই সব হারিয়ে ফিরে এসেছি বাংলার মানুষের কাছে এই জন্য যে... এই দেশের মানুষ দুবেলা পেট ভরে ভাত খাবে, তাদের বাসস্থান হবে, চিকিৎসা হবে, শিক্ষা হবে, উন্নত জীবন পাবে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে  বিজয় অর্জনকারী দেশ, সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে, আমরা যেন সেইভাবে বাংলাদেশকে গড়তে পারি।" তিনি   বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করার পাশাপাশি ১৫ আগাস্টে যারা শহীদ হন তাদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করেন। 

চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং সেগুলোকে তার সরকারের উপহার হিসেবে বর্ণনাকালে, আওয়ামী লীগই একমাত্র সরকার যারা বন্দরনগরীর ব্যাপক উন্নয়ন করেছে বলে তিনি দাবি করেন ।  

বিএনপির ২০১৩, ১৪, ১৫ সালের আন্দোলনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, "অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা, মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করার জবাব একদিন খালেদা জিয়া-তারেক জিয়াকে দিতে হবে, এর হিসেব একদিন জনগণ নিবে।" রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ ২২ নেতা-কর্মী হত্যা এবং প্রায় ৫শতাধিক আহত হয়া  

তিনি বলেন, "খালেদা জিয়া-রা পারে কেবল মানুষ হত্যা করতে। এর কারণ হিসেবে বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসর যারা এদেশে গণহত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ চালিয়েছিল তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই তারা এগুলো করছে। অন্যদিকে অওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাস করে এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই দেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে।"

প্রায় ৩৪ বছর আগে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় পুলিশের গুলির ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, "এরশাদের সময়ে ওই গুলির ঘটনায় দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাকে খালেদা জিয়া রেহাই দিয়েছিলেন। তার মানে হয়ত ওই গুলির ঘটনায় খালেদা জিয়াও জড়িত ছিল।"

চট্টগ্রামের উন্নয়নে কর্ণফূলী নদীর তলদেশে টানেল, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণসহ আগামীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে ফোর লেন থেকে থিক্স লেন করে দেয়ার পাশাপাশি সেখানে মেট্রো রেল করার জন্য সমীক্ষা হচ্ছে, ভায়াবল হলে তা করে দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করে দেশের সমুদ্র বিজয়ের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, "বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অধিকার আছে, সেই আইন জাতির পিতা করে গেছেন। আমরা সেই সমুদ্র জয় করেছি। আজ সেগুলো আমাদের কাজে লাগছে। কিন্তু, বিএনপি এই আইন ও অধিকার বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়নি। কেননা, জিয়ার জন্ম কলকাতায় আর পড়াশোনা করেছে করাচিতে, এরপর সে সেনাবাহিনীতে আসে।"

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ জনসভা উপস্থাপণ করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। শেখ হাসিনা ছাড়াও সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের,  কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ,  রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন,  সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম), দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, আবদুর রহমান এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক সহ অন্যান্য নেতৃবর্গ




মন্তব্য

মন্তব্য করুন