English
রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪
...

খালেদার বিরুদ্ধে গ্যাটকো মামলায় হাজিরা পরওয়ানা

বেগম খালেদা জিয়া

ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ জানুয়ারি ২০১৯। প্রশাসন ডেস্কঃ আজ ঢাকার বিশেষ জজ আদালত - ৩ এর বিচারক আবু সৈয়দ দিলদার ২০০৭ সালে দায়েরকৃত গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি'র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হাজিরা পরওয়ানা জারি করেন।

আদালতের নথি থেকে জানা যায় যে, ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় একটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করার একদিন পর খালেদা জিয়া ও কোকোকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে তৎকালীন জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, প্রভাবশালী ৯ জন সাবেক মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীসহ মোট ২৪ জনকে আসামী করে ২০০৮ সালের ১৩ মে দুদকের উপ-পরিচালক মো. জহিরুল হুদা চার্জশিট দাখিল করেন।

কি ছিল সেই অভিযোগ নামায়ঃ দুদকের দায়েরকৃত অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা পাস্পারিক যোগাযোগের মাধ্যমে দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানিকে (গ্যাটকো) ঢাকার কমলাপুর আইসিডি এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয় ঠিকাদারি কাজের সুবিধা প্রদান করে। এতে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার আর্থিক ক্ষতি সাধন হয়েছে। এছাড়া অবৈধভাবে আরাফাত রহমান কোকো ও ইসমাইল হোসেন সায়মন ২ কোটি ১৯ লাখ ৯৯ হা জার ৭৩৬ টাকার আর্থিক সুবিধাও নেন।

২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর অত্র মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনে অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে পৃথক পৃথক ভাবে হাইকোর্টে দুইটি রিট পিটিশন দাখিল করেন খালেদা জিয়া ও কোকো। এই আবেদনের ফলশ্রুতিতে তিনদিন পর হাইকোর্ট তাদের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। একই সাথে অত্র মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করা কেন ‘বেআইনি ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না -তা জানতে চান হাইকোর্ট। খালেদা জিয়ার রীট আবেদনের কারণে বিগত প্রায় ৮ বছর... নিন্ম আদালতে বিচারিক কার্যক্রম থাকে।

২০১৫ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া আবেদন দুইটি রিট করলে হাইকোর্ট তা খারিজ করে দিয়ে ২ মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। ২০১৬ সালের ৫ মার্চ খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ করলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।

উক্ত গ্যাটকো মামলার ধারাবাহিকতায় আজ ধার্যকৃত দিবসে খালেদা জিয়া ছিলেন অনুপস্থিত। তাঁর আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বেগম জিয়া অন্য মামলায় কারাগারে থাকায় চার্জ গঠনের শুনানি পিছিয়ে দেবার আবেদন করার করেন। তখন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সময় আবেদনের বিরোধীতা করে বলেন যে, মামলাটি ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্ট নির্দেশ রয়েছে। তাই লম্বা সময় না দিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে মামলাটির চার্জ গঠন করার আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করেন এবং আগামী ১৬ জানুয়ারি বেগম জিয়াকে আদালতে হাজির করার জন্য কারাকর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, গ্যাটকো মামলার আসামীদের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া, তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো ছাড়াও বাকি আসামিরা হলেনঃ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এএসএম শাহাদত হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক পরিচালক (পরিবহন) এএম সানোয়ার হোসেন, গ্লোবাল এগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড (গ্যাটকো) এর পরিচালক সৈয়দ তানভির আহমেদ ও সৈয়দ গালিব আহমেদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য একে রশিদ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন, সাবেক নৌ সচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং একেএম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ,  ও বন্দরের সাবেক সদস্য লুৎফুল কবীর।  

মামলার ২৪ জন আসামির মধ্যে  আরাফাত রহমান কোকো, সাবেক মন্ত্রী এমকে আনোয়ার, এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূইয়া, জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা আহমেদ আবুল কাশেমএই ছয়জন মারা গেছেন।  




মন্তব্য

মন্তব্য করুন