দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ দিনে আবেগাপ্লুত হলেন শেখ হাসিনা
- জাতীয় - প্রশাসন
- ২৪ ফেব্রয়ারি ২০১৯ - ৬ বছর আগে
- পড়া হয়েছে - ৬৫২২১
রাজনীতি ডেস্কঃ “আমি কিন্তু নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চিন্তা করি না। আমি জাতির পিতার কন্যা। আমি আপনাদের কাছে এটুকুই চাইব, আপনারা সবসময় আমাকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা হিসেবেই আপনাদের একান্ত আপনজন হিসেবে দেখবেন। সেটাই আমি চাই। সেটাইতেই আমি গর্বিত বোধ করি, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়।” আবেগ, অনুভূতি আর ভালবাসায় সিক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার তার সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে নিজ কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক বিদায় কালে এ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের পরিচালনায় এ বিদায়ী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, মহাপরিচালক বেগম নাসরিন আফরোজ, এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মুজিবুর রহমান, সহকারী পরিচালক মো. মকবুল হোসেন, প্রটোকল অফিসার খুরশীদ আলম অনুষ্ঠানে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশঃ
প্রধান মন্ত্রী বলেন যে, "গত ১০ বছরে তাঁর দুই মেয়াদকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার উপর গুরুত্ব দেন তিনি। তিনি বলেন, "সরকার ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত "মুজিববর্ষ" ঘোষণা করেছে। এছাড়া এ সময়ে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যমুক্ত অবস্থায় আমরা মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে চাই।"
জনগণের ভোটেই সকার গঠনঃ
তিনি বলেন যে, "১০ বছর একটানা থাকায় অনেক কাজ করে যেতে পেরেছি। এখনও বহু কাজ বাকি। সেটাও নির্ভর করে বাংলাদেশের জনগণের উপর। ৩০ তারিখে যদি তারা ভোট দেয়, তাহলে আবার আসতে পারব এবং কাজগুলোকে শেষ করতে পারব। আর তা না হলে মানুষের ভাগ্য মানুষ বেছে নেবে। এখানে আমার কোনো ক্ষোভ বা দুঃখ নেই। কেননা, আমার নিজের জীবনে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই, মানুষের ভাগ্য গড়াই আমার একমাত্র চাওয়া !"
বঙ্গবন্ধুকে স্মরণঃ
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে স্মরন করে বলেন, "আমি একথা সব সময় চিন্তা করি যে, আমার বাবা এদেশটাকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তাঁর মনে যে আকাঙ্ক্ষা ছিল মানুষকে... নিয়ে, সেই আকাঙ্ক্ষা যেন আমি পূরণ করে যেতে পারি। যেন তার আত্মা শান্তি পায় ! বাংলাদেশের মানুষ আজ আর কষ্টে নেই, তারা দু’বেলা পেট ভরে খেতে পারছে।"
বেতন ভাতা বৃদ্ধিঃ
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "১০টি বছর আপনাদের সঙ্গে কাজ করেছি, আমরা হচ্ছি টেম্পোরারি, আপনারা পার্মানেন্ট। আমরাতো ৫ বছরের জন্যই নির্বাচিত হয়ে আসি।’ তিনি বলেন, "আমার সৌভাগ্য যে, আমরা দ্বিতীয়বার আসতে পেরেছি। তাই আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আজ দৃশ্যমান হয়েছে।"
সামাজিক বৈষম্য দূর করাঃ
শেখ হাসিনা বলেন যে, "তার সরকার উন্নয়নের সমতায় বিশ্বাসী বলেই সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে দলিত হরিজন শ্রেণীর জন্যও ফ্ল্যাট তৈয়ারি করে দিচ্ছে।" তিনি বলেন, "এভাবে বস্তিবাসীর জন্য আমরা ফ্ল্যাট করে দেব এবং সাধারণ মানুষ প্রত্যেকেই যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। কোনো মানুষ অবহেলায় থাকবে না।"
নিম্ন পেশার নাম পরিবর্তনঃ
প্রধান মন্ত্রী বলেন, "নাম পরিবর্তন আমি এজন্য করলাম কারণ, তাদের ছেলেমেয়ে যখন শিক্ষিত হয়, তখন তাদের নাপিত বা সুইপার বলা অসম্মানজনক হয়। তাছাড়া, এখন একটু আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই তারা কাজগুলো করতে পারে। তাই, এসব পদবি পরিবর্তন করলাম।"
তিনি বলেন, "৯৬ সালে যখন সরকারে তখন সেনাবাহিনীর অধস্তনদের পদবিটা পরিবর্তন করে দিয়েছি। এরপর আমাদের প্রশাসন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যারা কাজ করেন, তাদের সম্মানজনক একটা পদবি যেন হয় তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কিছু ব্রিটিশ আমলের পদবি ছিল যেগুলো থাকার কোনো যৌক্তিকতাই ছিল না।"
নববর্ষ ভাতার ব্যবস্থাঃ
তিনি বলেন, "আমাদের নববর্ষটা যেন সবাই মিলে উদযাপন করতে পারে, সেজন্য আমরা বৈশাখী ভাতার ব্যবস্থা করেছি। যাতে সবাই মিলে নতুন বছরটি ভালোভাবে উদযাপন করতে পারে। আমরা আগামীতে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। ধনী-দরিদ্রের এ ভেদাভেদটা থাকবে না। আয়-বৈষম্যটা কমিয়ে এনে সবাই যেন ভালোভাবে বাঁচতে পারে, সেই ব্যবস্থাটাই আমরা করতে চাই।’"
পরিশেষে বিদায়কালে কবি সুকান্তের কবিতার কিছু পংক্তি আবৃতি করেন, "চলে যাব, তবু যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি / নবজাতকের কাছে এই আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।"
মন্তব্য