English
বৃহস্পতিবার ০৩ অক্টোবর ২০২৪
...

খোকার জানাজায় প্রবাসীদের ঢল

নিউইয়র্কের জেএমসিতে অনুষ্ঠিত হয় মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ১ম জানাজার নামাজ

স্টাফ রিপোর্টার, নিউইর্য়ক, ৪ অক্টোবর ২০১৯, সোমবার: আজ এশার নামাজের পর রাত সোয়া আটটার সময় নিউইয়র্কের জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী ও এমপি, অবিভক্ত ঢাকার সর্বশেষ সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার ১ম জানাজা সম্পন্ন হয়। এ জানাজার নামাজে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের (জেএমসি) ইমাম ও খতিব মাওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ ইমামতি করেন। 


এশার ফরজ নামাজের পর মসজিদের সাধারন সম্পাদক মন্জুর আহমেদ চৌধুরীর পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন জেএমসি'র সভাপতি ডা. সিদ্দিকুর রহমান, নিউইয়র্ক কন্স্যুলেটের ফার্স্ট সেক্রেটারি শামীম হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আব্দুস ছালাম পিন্টু, মরহুমের বড় ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ও ছোট ছেলে ইশফাক হোসেন। কন্স্যুলেট প্রতিনিধি শামীম হোসেন নিউইয়র্ক কন্স্যুলেট অফিস সাদেক হোসেন খোকার লাশ এবং মিসেস খোকার বাংলাদেশে যাবার জন্য অতিদ্রুত ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করা সহ যাবতীয় সহযোগিতা করেছেন বলে জানান। 


মরহুমের বড় ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন সবাইকে তাঁর পিতার প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা, দরদ দেখানোর জন্য সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানান। দেশের মাটিতে চিরনিদ্রায় শয়নের জন্য তাঁর পিতার শেষ ইচ্ছে ও আঁকুতি পূরণ হয়েছে এ অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তিনি জানান যে, কন্স্যুলেট অফিস থেকে তাঁর বাবা-মা দুজনের জন্যই ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করেছে এবং আগামীকাল মঙ্গলবার রাত ১১টায় আমিরাত এয়ারলাইন্সে পিতার লাশ নিয়ে স্বপরিবারে তাঁরা দেশে যাচ্ছেন। আর এ জন্য তিনি বাংলাদেশ কনস্যুলেটকে ধন্যবাদ জানান।

ইশরাক হোসেন বলেন, “আমি প্রথমেই আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের ভালবাসা ও সমর্থনের কারণেই আজকে উনাকে (খোকাকে) বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। আর এটাই ছিল উনার শেষ ইচ্ছা। আর কয়েকটি কথা না বললেই নয়। আমার বাবা যখন প্রথম এখানে (আমেরিকায়) এসেছিলেন, তখন থেকেই উনি চতুর্থ ধাপের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী ছিলেন।" 


সূদীর্ঘ দিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ট রাজনৈতিক সহযোদ্ধা আব্দুস সালাম পিন্টু তাঁর আবেগ বিজড়িত কণ্ঠে জানাজায় বহু দূর-দূরান্ত থেকে আগত বিএনপি, আওয়ামী লীগ সহ সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মী সহ দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের প্রবাসীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, "সাদেক হোসেন খোকা প্রমান করেছেন যে তিনি কোন দলের নেতা নন, তিনি দেশের নেতা, তিনি সমাজের নেতা, বাংলাদেশের কম্যুনিটির নেতা। এবং আজকের বাংলাদেশ... একজন মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়েছে, ঢাকা মহানগরের মানুষ আমরা একজন সংগঠককে হারিয়েছি, আজকে এই ধরনের একজন মানুষ আর খুঁজে পাওয়া মুশকিল।" তিনি জানাজায় উপস্থিত খোকার দুই পুত্রদের জন্য সবাইকে দোয়া করতে বলেন যাতে পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে পারে সে তোফিক যেন আল্লাহ্পাক তাদেরকে দেন। 


আব্দুস সালাম পিন্টু আরও বলেন, "বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেব জনাব খোকার অসুস্থ্যতার কথা শুনে ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি আলহাজ্ব এম এ কাইয়ুমকে পাঠিয়েছেন। আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাঁর সহকারী প্রেসসচিব মুশফিকুর রহমানকে পাঠিয়েছেন। মালয়েশিয়ার সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেনকে পাঠিয়েছেন।" তিনি মরহুমের জন্য সবাইকে দোয়া করতে বলেন আল্লাহ্পাক যেন তাঁকে বেহেস্ত নসিব করেন।তিনি সবাইকে সাদেক হোসেন খোকার জন্য এবং বাংলাদেশের জন্য দোয়া করার অনুরোধ জানান। যে দেশের জন্য সাদেক হোসেন খোকা যুদ্ধ করেছেন, দেশের মানুষ যুদ্ধ করেছি, সেই দেশটা যেন সঠিক থাকে। দীর্ঘদিন সাদেক হোসেন খোকাকে আমেরিকায় সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য দলের পক্ষ থেকে তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান। 


নিউইয়র্কে দীর্ঘদিন চিকিৎসারত সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন অনেক জনপ্রিয়। আর সেটাই প্রমান করেছে তাঁর জানাজায় দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের প্রবাসীদের স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপক অংশগ্রহনে। নিউইয়র্ক, কানেকটিকাট, বোস্টন, নিউজার্সি, পেনসিলভানিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি এলাকা, ভার্জিনিয়া, ফ্লোরিডা সহ আমেরিকার দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য প্রবাসীরা এই জানাজায় যোগ দেন। বাংলাদেশী কম্যুনিটির শীর্ষস্থানীয় মসজিদ "জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে" স্থানীয় মুসল্লিরা ইতিপূর্বে কোন জানাজায় মানুষের এত ব্যাপক স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি তাঁরা দেখেননি বলে আমাদের সংবাদ দাতাকে জানিয়েছেন। 


জানাজা নামাজের পূর্বে কফিনকে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা দিয়ে আচ্ছাদিত করে দেয়া হয় এবং মরহুম এই মহান বীর মুক্তিযোদ্ধাকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধারা শেষবারের মত সম্মান জানান। নামাজ শেষ হলে অগণিত মানুষ মরহুমের মুখ এক নজর দেখার জন্য আবেগ তাড়িত হয়ে গেলে লাশ দেখা নিয়ে ভীষণ জটলার সৃষ্টি হয়। জনতার সে ভীড় এড়াতে বিএনপি নেতাকর্মীরা হিমশিম খান এবং এক পর্যায়ে কফিনটি মসজিদের সামনে সদর রাস্তার পাশে মরদেহবাহী গাড়ীতে রাখা হয়। এরপর সুশৃঙ্খল ভাবে দীর্ঘক্ষণ ধরে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মরহুমকে দেখতে পেরে উপস্থিত প্রবাসীদের আবেগ প্রশমিত হয়। 




মন্তব্য

মন্তব্য করুন